বাচ্চার মানসিক বিকাশ: প্যারেন্ট হিসেবে করণীয়

🧠 বাচ্চার মানসিক বিকাশ: প্যারেন্ট হিসেবে করণীয়

শিশুর মানসিক বিকাশ (Cognitive Development) মানে হলো তার শেখার ক্ষমতা, ভাষা, স্মরণশক্তি, চিন্তাভাবনা, এবং সমস্যার সমাধান করার দক্ষতা তৈরি হওয়া। জন্মের পর থেকেই শিশুর মস্তিষ্ক প্রতিদিন নতুন অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে থাকে, আর এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে মা-বাবার ব্যবহার, পরিবেশ এবং সময় দেওয়া।

🍼 জন্মের পরপরই শুরু হয় মানসিক বিকাশ:

শিশুর মানসিক বিকাশের অনেকটাই ঘটে প্রথম ৫ বছরের মধ্যে, বিশেষ করে প্রথম ৩ বছর সবচেয়ে স্পর্শকাতর। এই সময়ে শিশুরা তাদের আশেপাশের পৃথিবী, ভাষা, সামাজিক যোগাযোগ, এবং আবেগ বোঝার দক্ষতা তৈরি করতে শুরু করে।

👪 প্যারেন্ট হিসেবে করণীয়:

  1. ভালোবাসা ও নিরাপত্তা:
    শিশুকে কোলে নেওয়া, চুমু খাওয়া, চোখে চোখ রাখা— এসব তাকে মানসিকভাবে নিরাপদ রাখে। এতে তার আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে।
  2. নিয়মিত কথা বলুন ও গান গাইুন:
    মা-বাবার মুখ দেখে শিশুরা কথা শেখে। তাই ছোটবেলা থেকেই তাকে লক্ষ্য করে কথা বলুন। ছড়া, গান, নাম ধরে ডাকা— এসব শিশুর ভাষা ও শোনার ক্ষমতা বাড়ায়।
  3. গল্প বলুন, বই দেখান:
    রঙিন বই, চিত্র দেখে গল্প বললে শিশুর মনোযোগ, শব্দ শেখা এবং কল্পনাশক্তি বাড়ে। নিয়ম করে রাতের বেলা ছোট গল্প বলা একটি ভালো অভ্যাস।
  4. খেলাধুলার সুযোগ দিন:
    ব্লক, বল, রং, পাজল, রান্নাঘরের সেফ জিনিসপত্র দিয়েও শিশু অনেক কিছু শেখে। খেলনা শিশুর চিন্তাভাবনা ও সৃজনশীলতা বাড়ায়।
  5. উৎসাহ দিন, প্রশ্নের উত্তর দিন:
    শিশু যদি কিছু বলতে বা করতে চায়, তাকে থামাবেন না। বরং উৎসাহ দিন। তার প্রশ্নের উত্তর ধৈর্য ধরে দিন, এতে কৌতূহল ও শেখার আগ্রহ বাড়ে।
  6. টেলিভিশন ও মোবাইল স্ক্রিন:
    ২ বছরের নিচের শিশুদের স্ক্রিন টাইম না থাকাই ভালো। বেশি স্ক্রিন মানসিক বিকাশকে ব্যাহত করে এবং ভাষা শেখার পথে বাধা তৈরি করে।
  7. সামাজিক যোগাযোগ:
    অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে দেওয়া, আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করানো— এসব শিশুর সামাজিক বুদ্ধি বাড়ায়।

🔍 কখন সতর্ক হবেন?

  • শিশু বয়স অনুযায়ী কথা বলা বা হাঁটাচলায় পিছিয়ে থাকলে
  • চোখে চোখ না রাখা বা ডাকে সাড়া না দিলে
  • অতিরিক্ত চুপচাপ বা অতি উত্তেজিত আচরণ করলে

এমন লক্ষণ থাকলে শিশুর চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।

📌 শেষ কথা:

শিশুর মানসিক বিকাশ প্রকৃতি অনুযায়ী চললেও পিতা-মাতা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো তাকে ভালোবাসা, সময়, ও উপযুক্ত সুযোগ দেওয়া। প্রতিদিন অল্প কিছু সময় দিলেই শিশুর বিকাশে বড় পার্থক্য আনা যায়।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন