নবজাতকের কোভিড-১৯ ও অন্যান্য ভাইরাস থেকে সুরক্ষা
নবজাতক শিশু পৃথিবীতে আসার পর প্রথম কয়েক মাস সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে, কারণ এই সময়ে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immune System) পুরোপুরি গড়ে ওঠে না। এই দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে তারা সহজেই ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে অসুস্থ হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড-১৯ এবং অন্যান্য ভাইরাস সংক্রমণ নতুন বাবা-মায়ের জন্য আরও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে সঠিক সতর্কতা ও পরিচ্ছন্নতা মেনে চললে এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। এই পোস্টে আমরা আলোচনা করব কিভাবে আপনার নবজাতককে কোভিড-১৯ এবং অন্যান্য ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখা যায়, কী কী সতর্কতা নেওয়া উচিত এবং কখন ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।
কোভিড-১৯ ও নবজাতক: ঝুঁকি এবং বাস্তবতা
যদিও নবজাতকরা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় কোভিড-১৯-এ তুলনামূলক কম আক্রান্ত হয়, তবে তারা একবার আক্রান্ত হলে জটিলতা দ্রুত বাড়তে পারে। বিশেষ করে অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাওয়া, দ্রুত শ্বাস নেওয়া, অস্বাভাবিক কান্না—এসবই উদ্বেগের বিষয়।
নবজাতকের ক্ষেত্রে প্রধান ঝুঁকি আসে পরিবারের সদস্য, আত্মীয় বা অন্যদের কাছ থেকে ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার মাধ্যমে। তাই পরিবারের সবারই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি।
ভাইরাস ছড়ানোর প্রধান উপায়
- শ্বাসতন্ত্রের ড্রপলেট: কাশি, হাঁচি বা কথা বলার সময় সংক্রমিত ব্যক্তির মুখ থেকে নির্গত ক্ষুদ্র তরলবিন্দু।
- স্পর্শের মাধ্যমে: সংক্রমিত হাত দিয়ে শিশুর ত্বক বা খেলনা স্পর্শ করলে ভাইরাস ছড়াতে পারে।
- দূষিত পৃষ্ঠের মাধ্যমে: টেবিল, দরজার হাতল, কাপড় বা বোতলের মাধ্যমে পরোক্ষ সংক্রমণ।
নবজাতককে ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখার করণীয়
- হাত ধোয়ার অভ্যাস: শিশুকে ধরার আগে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিন বা অ্যালকোহল-ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
- মুখে মাস্ক ব্যবহার: শিশুর কাছে আসা প্রত্যেক ব্যক্তিকে পরিষ্কার মাস্ক পরতে হবে, বিশেষত যদি তারা বাইরে থেকে আসে।
- ভিড় এড়িয়ে চলা: নবজাতককে হাসপাতাল, বাজার বা যেকোনো জনসমাগমস্থল থেকে দূরে রাখুন, যদি না একান্ত প্রয়োজন হয়।
- কাপড় ও বিছানার পরিচ্ছন্নতা: শিশুর কাপড়, বিছানার চাদর ও তোয়ালে প্রতিদিন পরিবর্তন ও ধুয়ে ফেলুন।
- খেলনা ও বোতল জীবাণুমুক্ত: প্রতিদিন খেলনা, ফিডার ও বোতল ফুটানো বা জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করুন।
- স্তন্যপান চালিয়ে যান: মায়ের দুধে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবডি থাকে যা শিশুকে ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- অসুস্থ ব্যক্তিকে দূরে রাখুন: পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে অন্তত ১৪ দিন নবজাতকের কাছ থেকে দূরে থাকুন।
বিশেষ সতর্কতা (কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে)
- শিশুর আশপাশে বাতাস চলাচলের জন্য জানালা খোলা রাখুন।
- যতটা সম্ভব বাইরের অতিথি আসা সীমিত করুন।
- যদি আপনি বা শিশুর মা কোভিড-১৯ পজিটিভ হন, তবে চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে শিশুর যত্ন নিন।
- শিশুকে বাইরে নিয়ে গেলে গরম কাপড় ও কভার ব্যবহার করে ঢেকে রাখুন।
অন্যান্য সাধারণ ভাইরাস প্রতিরোধ
কোভিড-১৯ ছাড়াও নবজাতকরা ফ্লু ভাইরাস, আরএসভি (RSV), রোটাভাইরাস, হাত-পা-মুখ রোগ এবং সর্দি-কাশির মতো ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
এগুলোর প্রতিরোধে:
- সময়মতো শিশুর সব টিকা দিন।
- অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম পরিবেশ থেকে শিশুকে সুরক্ষিত রাখুন।
- পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন, কারণ ঘুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
নিচের লক্ষণগুলোর যেকোনোটি দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন:
- অবিরাম বা উচ্চমাত্রার জ্বর
- শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
- খাওয়া বন্ধ করা বা খাবার নিতে অস্বীকৃতি
- অত্যধিক কান্না বা অস্বাভাবিক আচরণ
- অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৪% এর নিচে নেমে যাওয়া
শেষ কথা
নবজাতকের স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রতিদিনের যত্ন, পরিচ্ছন্নতা এবং সঠিক সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা মেনে চললে আপনার নবজাতক শুধু কোভিড-১৯ নয়, অন্যান্য ভাইরাস থেকেও সুরক্ষিত থাকবে। মনে রাখবেন, শিশুর যত্ন নেওয়া মানে শুধু অসুখের চিকিৎসা নয়, বরং অসুখ প্রতিরোধের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন