🥣 ৬ মাসের পর শিশুর খাবার: কীভাবে সলিড ফুড শুরু করবেন?
শিশুর জীবনের প্রথম ছয় মাস বুকের দুধই তার প্রধান খাদ্য। তবে ছয় মাস পার হওয়ার পর শিশুর পুষ্টি চাহিদা শুধু বুকের দুধ দিয়ে পূরণ করা সম্ভব হয় না। তখনই শুরু হয় নতুন এক অধ্যায়—সলিড ফুড বা ঘন খাবার খাওয়ানোর যাত্রা।
এই সময়টি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে, সঠিক উপায়ে সলিড ফুড শুরু না করলে শিশুর অপুষ্টি, ওজন কমে যাওয়া বা অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
🕒 কখন সলিড ফুড শুরু করবেন?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং ইউনিসেফ (UNICEF)-এর সুপারিশ অনুযায়ী, ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার পরই শিশুকে ঘন খাবার খাওয়ানো শুরু করা উচিত।
📌 পরীক্ষা করে দেখুন: শিশুর যদি মাথা সোজা রাখতে পারে, মুখে খাবার রেখে গিলে ফেলতে পারে এবং চামচের দিকে আগ্রহ দেখায়—তবে আপনি সলিড ফুড শুরু করার জন্য প্রস্তুত।
🥄 প্রথমে কোন খাবার দেবেন?
- ভাতের গুঁড়া / পাতলা খিচুড়ি
- ডাল পানি বা পাতলা ডাল ভাত
- সেদ্ধ আলু, মিষ্টি কুমড়া, গাজর (ম্যাশ করা)
- সেদ্ধ আপেল বা নাশপাতি
- সেদ্ধ সবজি স্যুপ
- সুজি (সেদ্ধ ও পাতলা)
- বাচ্চার জন্য বানানো সেমাই (দুধ ছাড়া)
⚠️ প্রথম কয়েকদিন শুধু ১–২ চামচ করে শুরু করুন। ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়ান।
🚫 কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন শুরুতে?
- মধু (১ বছর বয়সের আগে নয়)
- গরু বা মহিষের দুধ (১ বছর বয়স পর্যন্ত)
- লবণ ও চিনি
- মশলাযুক্ত বা ভাজা খাবার
- বাদাম, আঙ্গুর, চোকিং ঝুঁকিপূর্ণ খাবার
- প্রক্রিয়াজাত বা প্যাকেটজাত খাবার
🧪 অ্যালার্জির লক্ষণ বুঝবেন কীভাবে?
নতুন খাবার খাওয়ানোর পর যদি দেখা যায়:
- শরীরে র্যাশ বা চুলকানি
- মুখ বা চোখ ফুলে যাওয়া
- বমি বা ডায়রিয়া
- অতিরিক্ত কান্না বা অস্বস্তি
📌 প্রতিবার একটি নতুন খাবার খাওয়ানোর পর ৩ দিন অপেক্ষা করুন — "three-day rule"
🍽️ একটি সাধারণ সাপ্তাহিক খাদ্য রুটিন (৬–৮ মাস)
দিন | সকাল | দুপুর | বিকেল |
---|---|---|---|
শনিবার | চালের গুঁড়া | ডালভাত ম্যাশ | সেদ্ধ আপেল |
রবিবার | সুজি | মিষ্টি কুমড়া ম্যাশ | সেদ্ধ গাজর |
সোমবার | সেমাই | পাতলা খিচুড়ি | সেদ্ধ কলা |
মঙ্গলবার | দুধভাত | ডাল পানি | নরম পেঁপে |
বুধবার | রুটি ভেজানো | ম্যাশ আলু | সেদ্ধ নাশপাতি |
বৃহস্পতিবার | চালের গুঁড়া | সবজি স্যুপ | গাজর পিউরি |
শুক্রবার | সুজি | পাতলা খিচুড়ি | আপেল পিউরি |
🤱 বুকের দুধ কি বন্ধ করবেন?
না! সলিড ফুড শুরু হলেও বুকের দুধ চালিয়ে যেতে হবে কমপক্ষে ২ বছর পর্যন্ত। এটি শিশুর প্রধান পুষ্টির উৎস হিসেবে কাজ করে।
💡 গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস
- প্রতিটি খাবার নরম ও ভালোভাবে সেদ্ধ করুন
- খাবার জোর করে খাওয়াবেন না
- পরিচ্ছন্ন বাসন ও হাত ব্যবহার করুন
- খাবারের সময় শিশুর সাথে কথা বলুন
✅ উপসংহার
৬ মাস বয়স পার হলে শিশুর খাদ্যাভ্যাস গঠনের ভিত্তি তৈরি হয়। এই সময় সঠিক নির্দেশনা মেনে চললে আপনার শিশু পাবে সুস্থ ও শক্তিশালী জীবনের একটি চমৎকার শুরু।
আপনার অভিজ্ঞতা বা প্রশ্ন নিচে কমেন্ট করুন, অথবা আমাদের Facebook পেজে মেসেজ দিন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন